
প্রকাশিত: Tue, May 7, 2024 1:40 PM আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 8:08 PM
আপনারা দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে থাকবেন, আর নিজেদের সন্তানদের ঠিকই দুধ-ভাতে রাখতে চাইবেনÑ এটা হতে পারে না
সাইয়েদ আব্দুল্লাহ : নিজের সন্তানদের জন্য এবার আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর দাবি জানিয়েছেন আমলারা। তার মানে তারা তো তাহলে ইন্ডিরেক্টলি এটাই বলতে চাচ্ছেন যে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান নিম্নগামী এবং পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ নাই, তাই তাদের সন্তানদের জন্য আলাদা একটা উপযুক্ত পরিবেশ দরকার, তাই তো? পুরো দেশটাকে জাহান্নাম বানানোর পেছনে এই সচিবদের বিশাল বড় দায় আছে। বাংলাদেশের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বর্তমানে যেভাবে চলে, সেখানে রাজনীতিবিদের চেয়ে সচিবরা পলিসি মেকিংয়ে অনেকবেশি প্রভাবশালী।
দেশের প্রায় প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি ঢুকায়ে দিয়ে রেখেছে, যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বারোটা বাজায়ে দিচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলগুলোতে স্টুডেন্টরা রিফিউজি ক্যাম্পের চেয়েও মানবেতর জীবনযাপন করে, শান্তিমতো ঘুমানোর জায়গাটা পর্যন্ত নাই। ক্যান্টিনগুলোতে যে খাবার দেওয়া হয়, তা বোধহয় দেশের ভেতর সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্ট্যান্ডার্ডের খাবার। পর্যাপ্ত ক্লাসরুম কিংবা লাইব্রেরি ফ্যাসিলিটি নাই, রিসার্চের পেছনে ভালো ফান্ডিং নাই, এমনকি পাবলিক ভার্সিটিগুলোর শিক্ষক যারা (গদিতে থাকা দলের আজ্ঞাবহ পলিটিক্যালি প্রভাবশালী শিক্ষকরা বাদে), তাদের যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা ছিলো, সেগুলোও নাই।
এই সিস্টেমগুলো ঠিক করার কোনো উদ্যোগ নাই সচিবদের, এগুলো থেকে পরিত্রাণ কীভাবে পাওয়া যায় সেগুলো নিয়ে মাথাব্যথা নাই। তারা বরং নিজের সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর চেষ্টা করছে! এটাই হলো আমাদের দেশের আমলাদের চরিত্র। পুরো দেশের মানুষকে ডুবানোর কারিগর তারা, কিন্তু তারা চায় তাদের নিজেদের সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিট নিশ্চিত করতে কী পরিমাণ কষ্ট করতে হয়, কতোটা স্ট্রাগল করতে হয় একজন ছাত্রকে, যাদের এই অভিজ্ঞতা আছে, তারাই শুধু বুঝতে পারবেন। ওদিকে আমলাদের সন্তানরা মেধার জোরে এসব জায়গায় না টিকলেও অন্তত তাদের সচিব বাপ-মায়ের কোটায় নিজেদের নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে পড়তে পারে, সেই বন্দোবস্তই চলতেছে আরকি।
দেশের সব সচিব মিলে যদি উদ্যোগী হয়, তাহলে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে সমস্যা, সেগুলো ম্যাজিকের মতো বহুলাংশে ঠিক হয়ে যাবেÑ এটা শুধু বলার জন্য বলছি না, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এটা। সচিবরা এ ধরনের প্রস্তাব তোলার নজির কোথা থেকে পেলো? ইতোপূর্বে দেশে প্রতিরক্ষা বাহিনী এরকম কিছু ভার্সিটি বানিয়েছে (যেমন বিইউপি, এমআইএসটি), যেখানে অফিসাররা ডিগ্রি নেওয়ার পাশাপাশি, এসব প্রতিষ্ঠানে তাদের সন্তানদের জন্য কোটা থাকে। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিজেদের ডিগ্রির জন্য ঠিক আছে ব্যাপারটা, কিন্তু তাদের সন্তানদের জন্য কোটা কেন থাকবে? কোটা কনসেপ্টটাই এসেছে সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য। সেখানে অফিসারদের ছেলেমেয়ে তো আন্ডারপ্রিভিলেইজড না, তারা কেন এক্সট্রা ফ্যাসিলিটি পাবে? এসব প্রতিষ্ঠানে এমন নজির বহু আছে যেখানে বেশি মার্ক পেয়েও সাধারণ একজন পরীক্ষার্থী চান্স পায় না, কিন্তু সামরিক বাহিনীর অফিসারদের সন্তানরা কম মার্ক পেয়েও কোটা সুবিধায় চান্স পেয়ে যায়। এই ব্যাপারটা হল অন্যদের সাপেক্ষে পুরোপুরি বৈষম্যমূলক।
এই মডেলটা থেকেই হয়তো সচিবরা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট হলো, সচিবদের দাবি সামরিক বাহিনীর ওই ভার্সিটিগুলোর চেয়েও বেশি। ওসব জায়গায় বাইরের সাধারণ স্টুডেন্টরাও পড়তে পারে, খবরের কাগজগুলো থেকে যা জানতে পারলাম এখন পর্যন্ত, আমাদের আমলারা এক্সক্লুসিভলি নিজেদের এবং নিজেদের সন্তানদের জন্যই আলাদা ভার্সিটি চাচ্ছে।
আরও অবাক করা একটা বিষয় হলো, আমলারা যেই ২৪ টা দাবি জানিয়েছে, তার ভেতর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি আরেকটা উল্লেখযোগ্য দাবি আছে। সেটা হলো, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সচিবদের জন্য পিচকিপিং মিশনে (যেমনটা সামরিক বাহিনীতে চালু আছে) পদ সৃষ্টি করে তাদের সেখানে পদায়ন করতে হবে। চিন্তা করতে পারেন ব্যাপারটা? প্রশাসনে যুক্ত এই সচিবদের পদের তুলনায় জনবল কম থেকে শুরু করে তাদের আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতায় এমনিতেই এসব সেক্টরে কচ্ছপগতিতে কাজ হয়, যা বহুমানুষের ভোগান্তির সৃষ্টি করে। এরা যদি নিজেদের কাজ ফেলে ডেপুটেশনে পিচকিপিং মিশনে চলে যায় (ডলার কামানোর লোভে), তাহলে দেশের কাজের হবে কী? এদের লোভ কোনো জায়গায় পৌঁছেছে ভাবতে পারেন?
সচিবরা এই যে নিজেদের সন্তানদের জন্য আলাদা ভার্সিটির দাবি জানিয়েছেন, এই টাইপ দাবির প্রতি তীব্র আপত্তি জানাচ্ছি। আপনারা দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে থাকবেন, আর নিজেদের সন্তানদের ঠিকই দুধ-ভাতে রাখতে চাইবেনÑ এটা হতে পারে না। ছোটলোকি টাইপ চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জাতে তোলার চেষ্টা করেন, তাহলে দেশের সবার উপকার হওয়ার পাশাপাশি, আপনাদের সন্তানরাও এসব জায়গা থেকে অটোমেটিক্যালি উপকৃত হতে থাকবে। ৪-৫-২৪। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
